সূরা ইখলাসের ফজিলত

 সূরা ইখলাস তিলাওয়াতে অফুরন্ত ফযীলত

সূরা ইখলাস এর ফজিলত
সূরা ইখলাস এর ফজিলত 



পবিত্র কুরআনের একটি ছোট্ট সূরার নাম সূরাতুল ইখলাস। এই সূরাটির মধ্যে বিশেষভাবে অত্যধিক গুরুত্বের সাথে মহান আল্লাহর একত্ববাদ তথা তাওহীদের বিষয়টি চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করা হয়েছে বিধায় এই সূরাটির নামকরণ করা হয়েছে ইখলাস। এই সূরাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন। নবী করীম (সা) এই সূরাটির গুরুত্ব সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামকে নানাভাবে বুঝিয়েছেন। তিনি এটা পছন্দ করতেন যে, মুসলমানগণ এই সূরাটি মানুষের মধ্যে সর্বাধিক প্রচার করুক। কারণ এই সূরাটিতে ইসলামী জীবন বিধানের মৌলিক আকিদা-বিশ্বাস তথা তাওহীদ মাত্র চারটি সংক্ষিপ্ত বাক্যে অতীব বলিষ্ঠ ভাষা ও ভঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।


মহাগ্রন্থ আল কুরআন মানুষের জন্যে যে জীবন বিধান উপস্থাপন করেছে, তার প্রধান তিনটি আকীদাই এর ভিত্তি। ১. তাওহীদ, ২. রিসালাত ও ৩. আখিরাত। এ সূরাটি নির্ভেজাল ও অকাট্য তাওহীদের আকীদা উপস্থাপন করে বলেই নবী করীম (সা) সূরাটিকে পবিত্র কুরআনের এক তৃতীয়াংশ বলে অভিহিত করেছেন। হযরত আয়িশা (রা) বলেন, রাসূল (সা) একজন সাহাবীকে একটি বিশেষ অভিযানে নেতা নিযুক্ত করে প্রেরণ করেন। অভিযানে থাকাকালীন সময়ে ঐ সাহাবী স্থায়ী নিয়ম করে নিয়েছিলেন যে, তিনি প্রত্যেক নামাযেই সূরা ইখলাস পড়ে কিরআত শেষ করতেন।

অভিযান থেকে ফিরে আসার পরে তাঁর সাথীরা বিষয়টি রাসূল (সা)-এর কাছে উল্লেখ করলেন। নবী করীম (সা) উক্ত সাহাবী সম্পর্কে বললেন, তাঁকে প্রশ্ন করো, কেন সে এমন করেছে? ঐ সাহাবীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এই সূরায় আল্লাহ তা'আলার পরিচয় ও তাঁর গুণ বর্ণনা করা হয়েছে। এ কারণে এই সূরাটি তিলাওয়াত করতে আমার সব থেকে বেশী ভালো লাগে। তাঁর একথা শুনে রাসূল (সা) বললেনঃ


أخبروه بأن الله تعالى يحبه .


যাও ঐ লোকটিকে বলো মহান আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন। (বুখারী, হাদীস নং ৭৩৭৫)


হযরত আনাস (রা) বলেন, একজন আনসার সাহাবী কুবা মসজিদে নামায আদায় করাচ্ছিলেন। তাঁর নিয়ম ছিলো তিনি প্রত্যেক রাকাআতে প্রথমে সূরা ইখলাস পড়তেন পরে অন্য কোনো সূরা তিলাওয়াত করতেন। উপস্থিত লোকজন এতে আপত্তি জানিয়ে বললো, তুমি এমন করছো কেন? সূরা ইখলাস তিলাওয়াতের পর একেই যথেষ্ট মনে না করে আরো অন্য সূরা মিলিয়ে পড়ছো এটা ঠিক নয়। সূরা ইখলাসই শুধু পড়ো না হয় এ সূরা বাদ দিয়ে অন্য কোনো সূরা পড়ো।

ঐ সাহাবী বললো, আমি এই সূরা পাঠ করা বাদ দিতে পারবো না। তোমরা চাইলে আমি নামায আদায় করাবো, না হয় আমি ইমামতি ছেড়ে দিবো। কিন্তু লোকজন তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে ইমাম বানানো পছন্দ করলো না। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নবী কারীম (সা)-কে জানানো হলে তিনি উক্ত সাহাবীকে বললেন, তোমার সাথীরা যা চায় তা মেনে নিতে তোমার অসুবিধা কোথায়? ঐ সাহাবী বিনয়ের সাথে জানোলো, এই সূরাটিকে আমি অত্যধিক ভালোবাসি। তাঁর কথা শুনে রাসূল (সা) বললেন, এই সূরাটির প্রতি তোমার এমন ভালোবাসাই তোমাকে জান্নাতের অধিকারী বানিয়েছে। (বুখারী) আরেক হাদীসে নবী করীম (সা) বলেছেনঃ


حبك أياها أدخلك الجنة .


অর্থাৎ সূরা ইখলাসের প্রতি ভালোবাসাই তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছে। (তিরমিযী, হাদীস নং ২৯০১) এই সূরা একবার পড়লে পবিত্র কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। নবী কারীম (সা) বলেছেন :

والذي نفسي بيده إنها لتعدل ثلث القرآن - 

সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ নিহিত। এই সূরা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। (বুখারী, হাদীস নং ৫০১৩) আরেক হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে :


من قرأ (قل هو الله أحد) فكأنما بثلث القرآن -


অর্থাৎ যে ব্যক্তি সূরাতুল ইখলাস পড়েছে সে পবিত্র কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করেছে। (মুসনাদে আহ্লাদ, ৫ম খণ্ড, ১৪১) অতএব হাদীস অনুযায়ী সূরা ইখলাস তিনবার পড়লে সে যেনো সম্পূর্ণ কুরআন পড়লো। আরো পড়ুন দোয়া কুনুত


নামাযের হিসাবে একথা প্রমাণ হয়েছে যে, ১ মিনিটেই এই সূরাটি ৫/৬ বার পড়া যায়, তাহলে মাত্র ১ মিনিটেই পবিত্র কুরআন ২ বার খতম দেয়ার সওয়াব অর্জন করা যেতে পারে। এভাবে কোনো ব্যক্তি যদি প্রত্যেকদিন ১০ মিনিটে ৬০ বার সূরা ইখলাস পড়ে, তাহলে ৩০ দিনে অর্থাৎ প্রতিমাসে সে ব্যক্তি ১,৮০০ বার সূরা ইখলাস পড়লো। হাদীস অনুসারে, সে ব্যক্তি প্রত্যেক মাসে ৬০০ বার পবিত্র কুরআন সম্পূর্ণ তিলাওয়াত করলো। আর সূরা ইখলাস পড়ার এই ধারাবাহিকতা যদি কোনো ব্যক্তি সারা বছর জারী রাখে, তাহলে সে ব্যক্তি বছরে ৭,২০০ বার সম্পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করার সওয়াব লাভ করতে পারে। 

এটাতো শুধু এক বছরের হিসাব, কোনো ব্যক্তি যদি মৃত্যু পর্যন্ত এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখে তাহলে কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে সক্ষম হবে ইনশা-আল্লাহ। সুতরাং আমাদের সকলকেই প্রচেষ্টা চালাতে হবে, আমরা যেন সূরা ইখলাস বার বার তিলাওয়াত করে এর বিনিময়ে অগণিত সওয়াব উপার্জন করতে পারি। একথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, সূরাটি তিলাওয়াত করার সাথে সাথে এর অর্থ, তাৎপর্য, গুরুত্ব ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করতে হবে। এ সূরা মানুষকে কি শিক্ষা দিতে চায়, মানুষের কাছে তাঁর আপন স্রষ্টার পরিচয় কিভাবে তুলে ধরেছে, আল্লাহ তা'আলার কোন ধরনের গুণ-বৈশিষ্ট্য, এ গুলো সঠিকভাবে জানতে হবে। আরো পড়ুন-রুহ কি ? রূহু শব্দের তাৎপর্য-


কেননা এই সূরা তিলাওয়াত করলে, সওয়াব পাওয়া যাবে। কিন্তু এর অর্থ, ব্যাখ্যা, তাৎপর্য, গুরুত্ব ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং মূল শিক্ষা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন না করলে যেমন ঈমানের স্বাদ অনুভব করা যাবে না, তেমনি তাওহীদের প্রতি অটল-অবিচল তথা দৃঢ়পদ থেকে আমল করাও সম্ভব হবে না। সুতরাং সূরা ইখলাস পড়লে পবিত্র কুরআনের এক তৃতীয়াংশ বা তিনবার পড়লে সম্পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করার সওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে, সম্পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত না করে শুধুমাত্র সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করাকেই যথেষ্ট মনে করতে হবে? বরং সূরা-ইখলাস পড়ার সাথে সাথে পবিত্র কুরআনও একটু একটু করে তিলাওয়াত করতে হবে এবং এভাবে সম্পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত শেষ করতে হবে। পাশা-পাশি পবিত্র কুরআনের তাফসীর অধ্যয়ন করলেও এর উপর আমল করা সহজ হয়ে যাবে, ইনশা-আল্লাহ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url